ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে?

ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে?
MostPlay

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা স্থবির করে রেখেছে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। কবে হবে তা-ও নিশ্চিত নয়। আবার হয়ে গেলেই যে তা মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে দেবে তেমনও নয়। তবে এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

৩৫টি কোম্পানি ও একাডেমিক ইনস্টিটিউশন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাদের অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তারা প্রাণীদেহে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করে দেখেছে। যাদের মাঝে বোস্টনের বায়োটেক ফার্ম মোর্ডেনা দ্রুত মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করবে বলে জানা গেছে। 

এর আগে জানুয়ারির শুরুতে চায়না একদল বিশেষজ্ঞকে ভাইরাস তৈরি করে তা কীভাবে মানবদেহে আক্রমণ চালায় এবং মানুষকে অসুস্থ করে দেয়, তা নিয়ে গবেষণার অনুমতি দেয়।

অবশ্য এমন দ্রুততম সময়ের মাঝে পরীক্ষা শুরুর আরো একটি কারণ রয়েছে। ফ্লুকে সাধারণত মহামারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যদিও কেউ আগাম বলতে পারে না বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলতে যাওয়া পরবর্তী সংক্রামক রোগ আদৌ করোনাভাইরাসের কারণে হবে কিনা। ভ্যাকসিনোলজিস্টরা আগের রোগ সংক্রামক জীবাণুগুলোর কথা বিবেচনায় রেখে নিজেদের কাজ পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে অসলোর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারেডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড হ্যাটচেট বলেন, যেখানে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকি তা হলো, কীভাবে অন্য করোনাভাইরাসগুলোর ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল।’

করোনাভাইরাস এর আগে আরো দুটি মহামারী সৃষ্টি করেছিল। যার একটি ছিল ২০০২-০৪ সালে চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া সার্স এবং ২০১২ সালে সৌদি আরবে শুরু হওয়া মার্স। দুটি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনমন ঘটার পর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ম্যারিল্যান্ডের নোভাভ্যাক্স কোম্পানি, যারা এখন সেই ভ্যাকসিনগুলোকে কভিড-১৯-এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে যাচ্ছে। তারা বলেছে, সামনে তারা মানবদেহে এর পরীক্ষা চালাবে।

এদিকে নতুন এ করোনাভাইরাস আগের দুটি একই গোত্রের ভাইরাস সার্স ও মার্সের সঙ্গে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জিনগত উপাদানও ভাগাভাগি করে। মানবদেহে এদের কাজ করার ধরনও অনেকটা একই রকম।

সব ভ্যাকসিন একই রকম মূলনীতি অনুসারে কাজ করে থাকে। যেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে স্বল্পমাত্রার ভ্যাকসিন দিয়ে রোগ সংক্রামক জীবাণুর বিপরীতে অ্যান্টিবডি উত্পাদন করা হয়, যা মানবদেহে ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি যদি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, তবে এটি দ্রুত গতিশীল হয়ে প্রতিরোধমূলক কাজ শুরু করে। 

সাধারণত প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জিত হয় দুর্বল গঠনের ভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে। তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এটা আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে থেমে যায়। এ পদ্ধতি অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। ভাইরাস আক্রান্তের দেহে থেকে যেতে পারে, যা বাহককে পুনরায় অসুস্থ করে দিতে পারে। যে কারণে উচ্চমাত্রায় এটি প্রদান করে এটিকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া সম্ভব। কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন এভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নতুন টেকনোলজি নিয়ে হাজির হয়েছে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস সাধারণ তিনটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথম কয়েকজন সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবীর মাঝে ভ্যাকসিন পরীক্ষা করে দেখা হয়। যেখানে নিরাপত্তা এবং বিরূপ প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখা হয়। দ্বিতীয়ত এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় আক্রান্ত এলাকার শখানেক লোককে। এটা মূলত ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তা দেখার জন্য। এরপর এই ডোজ দেয়া হয় হাজারো মানুষকে।  অবশ্য এক্ষেত্রে আশঙ্কাও থাকে। কারণ সবার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একই রকম হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যার ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে তিনি অনিরাপদ বা অকার্যকর কিংবা দুটোই হতে পারেন। তাই এ ট্রায়াল বা পরীক্ষাগুলো তাড়াহুড়ো করে করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আগে একই ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করে থাকে, তবে তারা অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। 

তবে ভ্যাকসিন তৈরি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ ২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বৈঠকে বলেছেন নভেম্বরের আগে ভ্যাকসিন তৈরি করতে। এ বিষয়ে ভ্যাকসিনোলজিস্ট অ্যানেলিয়েস ওয়াইল্ডার-স্মিথ বলেছেন, ‘বেশির ভাগ ভ্যাকসিনোলজিস্টের মতো আমিও মনে করি না ১৮ মাসের আগে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব।’

 

এছাড়া আরো একটি সমস্যা রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরি করা হলেও সেটি প্রয়োজন হবে বিশাল পরিমাণে। বেশির ভাগ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থারই সেইসংখ্যক ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সক্ষমতা নেই। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিনের বাস্তবতা এখনো বেশ দূরের বলেই মনে হচ্ছে। সে পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাই রক্ষা করতে পারে করোনার আক্রমণ থেকে। দ্য গার্ডিয়ান

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা স্থবির করে রেখেছে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। কবে হবে তা-ও নিশ্চিত নয়। আবার হয়ে গেলেই যে তা মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে দেবে তেমনও নয়। তবে এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

৩৫টি কোম্পানি ও একাডেমিক ইনস্টিটিউশন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাদের অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তারা প্রাণীদেহে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করে দেখেছে। যাদের মাঝে বোস্টনের বায়োটেক ফার্ম মোর্ডেনা দ্রুত মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করবে বলে জানা গেছে। 

এর আগে জানুয়ারির শুরুতে চায়না একদল বিশেষজ্ঞকে ভাইরাস তৈরি করে তা কীভাবে মানবদেহে আক্রমণ চালায় এবং মানুষকে অসুস্থ করে দেয়, তা নিয়ে গবেষণার অনুমতি দেয়।

অবশ্য এমন দ্রুততম সময়ের মাঝে পরীক্ষা শুরুর আরো একটি কারণ রয়েছে। ফ্লুকে সাধারণত মহামারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যদিও কেউ আগাম বলতে পারে না বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলতে যাওয়া পরবর্তী সংক্রামক রোগ আদৌ করোনাভাইরাসের কারণে হবে কিনা। ভ্যাকসিনোলজিস্টরা আগের রোগ সংক্রামক জীবাণুগুলোর কথা বিবেচনায় রেখে নিজেদের কাজ পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে অসলোর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারেডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) প্রধান নির্বাহী রিচার্ড হ্যাটচেট বলেন, যেখানে আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকি তা হলো, কীভাবে অন্য করোনাভাইরাসগুলোর ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল।’

করোনাভাইরাস এর আগে আরো দুটি মহামারী সৃষ্টি করেছিল। যার একটি ছিল ২০০২-০৪ সালে চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া সার্স এবং ২০১২ সালে সৌদি আরবে শুরু হওয়া মার্স। দুটি ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনমন ঘটার পর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ম্যারিল্যান্ডের নোভাভ্যাক্স কোম্পানি, যারা এখন সেই ভ্যাকসিনগুলোকে কভিড-১৯-এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে যাচ্ছে। তারা বলেছে, সামনে তারা মানবদেহে এর পরীক্ষা চালাবে।

এদিকে নতুন এ করোনাভাইরাস আগের দুটি একই গোত্রের ভাইরাস সার্স ও মার্সের সঙ্গে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জিনগত উপাদানও ভাগাভাগি করে। মানবদেহে এদের কাজ করার ধরনও অনেকটা একই রকম।

সব ভ্যাকসিন একই রকম মূলনীতি অনুসারে কাজ করে থাকে। যেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে স্বল্পমাত্রার ভ্যাকসিন দিয়ে রোগ সংক্রামক জীবাণুর বিপরীতে অ্যান্টিবডি উত্পাদন করা হয়, যা মানবদেহে ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি যদি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে, তবে এটি দ্রুত গতিশীল হয়ে প্রতিরোধমূলক কাজ শুরু করে। 

সাধারণত প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জিত হয় দুর্বল গঠনের ভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে। তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এটা আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে থেমে যায়। এ পদ্ধতি অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। ভাইরাস আক্রান্তের দেহে থেকে যেতে পারে, যা বাহককে পুনরায় অসুস্থ করে দিতে পারে। যে কারণে উচ্চমাত্রায় এটি প্রদান করে এটিকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া সম্ভব। কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন এভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নতুন টেকনোলজি নিয়ে হাজির হয়েছে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস সাধারণ তিনটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথম কয়েকজন সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবীর মাঝে ভ্যাকসিন পরীক্ষা করে দেখা হয়। যেখানে নিরাপত্তা এবং বিরূপ প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখা হয়। দ্বিতীয়ত এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় আক্রান্ত এলাকার শখানেক লোককে। এটা মূলত ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তা দেখার জন্য। এরপর এই ডোজ দেয়া হয় হাজারো মানুষকে।  অবশ্য এক্ষেত্রে আশঙ্কাও থাকে। কারণ সবার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একই রকম হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যার ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে তিনি অনিরাপদ বা অকার্যকর কিংবা দুটোই হতে পারেন। তাই এ ট্রায়াল বা পরীক্ষাগুলো তাড়াহুড়ো করে করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আগে একই ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করে থাকে, তবে তারা অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। 

তবে ভ্যাকসিন তৈরি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ ২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বৈঠকে বলেছেন নভেম্বরের আগে ভ্যাকসিন তৈরি করতে। এ বিষয়ে ভ্যাকসিনোলজিস্ট অ্যানেলিয়েস ওয়াইল্ডার-স্মিথ বলেছেন, ‘বেশির ভাগ ভ্যাকসিনোলজিস্টের মতো আমিও মনে করি না ১৮ মাসের আগে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব।’

এছাড়া আরো একটি সমস্যা রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরি করা হলেও সেটি প্রয়োজন হবে বিশাল পরিমাণে। বেশির ভাগ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থারই সেইসংখ্যক ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার সক্ষমতা নেই। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিনের বাস্তবতা এখনো বেশ দূরের বলেই মনে হচ্ছে। সে পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থাই রক্ষা করতে পারে করোনার আক্রমণ থেকে। দ্য গার্ডিয়ান

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password