অদম্য রিংকি কি থেমে যাবে?

অদম্য রিংকি কি থেমে যাবে?
MostPlay

রিংকি সরকার। এক অদম্য কিশোরীর নাম। চরম অভাব অনটন আর শত বাঁধা পেরিয়েও এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। রিংকি সরকারের পেছনের ঘরখানাই স্পষ্ট দেখিয়ে দেয় তাদের জীবন সংগ্রামের করুণ চিত্র। বরগুনা শহরের পশ্চিম বরগুনা এলাকায় এক শতাংশ জমির উপর তাদের ভাঙ্গাচোরা একখানা টিনের ঘর। বৃষ্টি হলেই থাল প্লেট যা আছে তার সবই প্রায় পেতে রাখতে হয় ঘরের মেঝেতে। ফুটো চালের পানি ঠ্যাকাতে। 

বাবা বেঁচে নেই। স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে বছর তিনেক আগে। বাবা সুমন্ত সরকারের অবস্থাও ভালো ছিলো না খুব একটা। ফুটপাতে চুন বিক্রী করতেন তিনি। আর এখন স্বামীহীন সংসারে তিন মেয়েকে নিয়ে বড়ই অসহায় রিংকি সরকারের মা মিনতি সরকার। বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে স্থানীয়দের চাঁদার টাকায় বিয়ে দিয়েছেন মা মিনতি। পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ছোট মেয়ে রূপা সরকার আর রিংকি সরকারকে নিয়ে এই ঘরেই বসবাস মিনতি সরকারের। 

বাজার থেকে আস্ত সুপারি কিনে তা ঘরে বসে মা আর দুই মেয়ে মিলে কেটে আবার দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রী করেন মিনতি সরকার। আর এতেই যে রোজগার তাতেই চলে রিংকি সরকার, ছোট মেয়ে রূপা সরকার আর মা মিনতি সরকারের জীবনসংসার। কিন্তু দুই মেয়ের লেখাপড়া? লেখাপড়ার তো অনেক খরচ। তাহলে কি বন্ধ হয়ে যাবে রিংকি সরকারের লেখাপড়া?

স্থানীয় প্রতিবেশী মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, তিন মেয়েকে নিয়ে মা মিনতি সরকার কতটা কষ্ট করে যাচ্ছে তা আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা সরকারের বিয়ে তাও হয়েছিলো স্থানীয়দের চাঁদার টাকায়। এখনও দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে সৃষ্টে চলে মিনতি সরকারের সংসার। 

বরগুনা শহরের কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে রিংকি সরকার। কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, একজন মা কতটা কষ্ট করতে পারেন, তার সন্তানদের জন্য তার অনন্য উদাহরণ রিংকির মা মিনতি সরকার। বাজার থেকে আস্ত সুপারি কিনে সারাদিন ধরে তা হাতে কেটে আবার বাজারের দোকানে দোকানে ঘুরে তা বিক্রী করে যে দু’পয়সা রোজগার তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার। এরমধ্যে দুই মেয়ের লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন মিনতি। শত কষ্ট আড়াল করেছেন তবুও কাউকে কিছুই বুঝতে দেননি তিনি। আমরাও যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি রিঙ্কির পাশে থাকার।’

রিংকির মা মিনতি সরকার বলেন, তার জীবনটাই চলছে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃসময় কেটেছে এবং কাটছে এখন এই লক ডাউনের মাঝে। যেহেতু সকল চা-পানের দোকান বন্ধ ছিল তখন আমার সুপারি বিক্রীও বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিলো আয় রোজগারও। তারপরেও বাড়ি এসে কিছু কিছু ক্রেতা আমার কাছ থেকে সুপারি কিনেছেন। সহযোগিতাও করেছেন। আর এভাবেই একরকম কোনমতে তিন মায়ে-ঝিয়ে বেঁচে বর্তে আছি।’

তিনি আরো বলেন, তার ছোট মেয়ে রূপাও অনেক মেধাবী। কিন্তু কীভাবে চালাবেন তিনি তার দুই মেধাবী মেয়ের পরবর্তী লেখাপড়া তা তিনি জানেন না।

রিংকির সাথে কথা বললে অশ্রুসজল চোখে রিংকি জানায়, তার মা অনেক কষ্ট করেন। তার মায়ের কষ্ট দেখে সে একা একা প্রায় নিঃরবে কাঁদে। কত কষ্ট করে দোকানে দোকানে ঘুরে সুপারি বিক্রী করেন তার মা। তারপর সারাদিনতো সুপারি কাটার কাজ আছেই। সুপারি কাটতে কাটতে তার মায়ের দু’হাতে দাগ হয়ে গেছে।

রিংকি আরো জানায়, ছোটবোন রূপাকে নিয়ে মা মিনতি সরকারকে সুপারি কাটার সহযোগিতা করার ফাঁকে ফাকে লেখাপড়া করেই তার এই ফলাফল। অল্পের জন্য সে গোল্ডেন জিপিএ পায়নি। তবে যদি সে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে তবে উচ্চ মাধ্যমিকে সে গোল্ডেন জিপিএ পাবে এমনটাই আশা তার। বড় হয়ে একজন সফল আইনজীবী হতে চায় রিংকি সরকার।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password