তুমি চলে গেলে তাই, আমিও গেলাম...

তুমি চলে গেলে তাই, আমিও গেলাম...
MostPlay

Sorry মাফ করে দিও আমাকে, আমি তোমাদের ভাল মেয়ে হতে পারলাম না। মাফ করে দিও। খোদা হাফিজ।’ একটি সাদা কাগজে এই বাক্যগুলো লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করে জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দিবা শাখার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসনুবা নাবিলা চৌধুরী নীর। 

 

মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাত ৯টায় জয়পুরহাট থানা পুলিশ আরাফাত নগরের একটি বাসা থেকে নাবিলার মরদেহ উদ্ধার করে। নাবিলার বাবা আব্দুস সামাদ চৌধুরী বগুড়ায় রেশম বোর্ডের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। মা মাহমুদা বেগম জয়পুরহাট মোসলিম নগর এলাকার মহিলা কলেজ এর প্রভাষক। তাদের গ্রামের বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামে। 

নাবিলার মৃত্যুর পরের দিন আজ বুধবার (১১ মার্চ) সকাল ৮টায় জয়পুরহাট শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের স্টাফ কক্ষ থেকে ইনজামামুল হক ইমরান নামের এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই কক্ষের ফ্যানের সাথে বিছানার চাদর গলায় পেঁচিয়ে ইমরান আত্মহত্যা করে। সে জয়পুরহাট পৌরসভার মাদারগঞ্জ মহল্লার কলা ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে। ইমরান জয়পুরহাট শহীদ জিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। 

মৃত্যুর আগে সে বাম হাতে কলম দিয়ে লিখে যায় ‘Nabila + Imran আমার জন্য যে চলে গেলো, আমিও গেলাম’।’ তার এই আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে সে প্রমাণ দিয়ে যায় নাবিলা তার প্রেমিকা ছিল। নাবিলা আত্মহত্যা করায় একই পথ সেও বেছে নেয়।
  
ইমরানের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জয়পুরহাট রামদেও বাজলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় নাবিলার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মাঝে ইমরান মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তাকে জয়পুরহাট ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে তিন মাস চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্যও করা হয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

মঙ্গলবার নাবিলার মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ইমরান তাকে দেখতে যায়। পরে বাড়ি ফিরে সে জানায়, মৃত্যুর আগে নাবিলা তাকে কয়েক বার ফোন করেছিল। কিন্তু ইমরান রিসিভ করেনি। নাবিলার মৃত্যুর পর ফোন করার বিষয়টি আর ভুলতে পারছে না সে। সব সময় অস্থিরতা দেখিয়ে শুধু কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘কি কথা বলতে চেয়েছিল নাবিলা। ফোন রিসিভ না করায় সেটা জানা হলো না’। 

এরপর রাত ৮টার দিকে ইমরান আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরিবারের বাধার কারণে রক্ষা পায়। এ অবস্থায় ইমরান পূর্বে চিকিৎসা নেওয়া চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলে ভাল থাকবেন পরিবারের কাছে এমন বায়না ধরেন। তাকে শান্ত রাখতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদ উদ্দিন ছেলে ইমরান ও বড় ভাইয়ের জামাতা রাজমিস্ত্রি আব্দুল মালেককে নিয়ে ট্রাক টার্মিনাল এলাকার চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে ইমরানকে রেখে আসেন। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে খবর আসে ইমরান আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

ইমরানের বাবা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে নাবিলা নামের মেয়েটির তিন বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা গরীব মানুষ। ছেলেকে অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু কিছুতেই শোনেনি। নাবিলার আত্মহত্যার খবর পাওয়ার পর থেকে ছেলেটি যেন পাগলের মত আচরণ শুরু করে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। অনেক বোঝানোর পর বায়না ধরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যাবার। বুঝতে পারিনি আমাদের ফাঁকি দিয়ে আত্মহত্যার জন্যই ছেলেটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যাবার জন্য বায়না ধরেছিল’।

এ বিষয়ে নাবিলার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য বার বার যোগাযোগ করা হলেও পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। চেতনা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ এস এ জাহাঙ্গীর তুহিন বলেন, রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার বাবা ফরিদ উদ্দিন চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে যান। আজ সকাল ৮টার দিকে আমাদের স্টাফ রুমে ইমরানের মরদেহ ঝুলতে দেখে আমরা পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ এসে তার মরদেহ নিয়ে যায়। প্রেম সংক্রান্ত কারণে ইমরানের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা তার বাবা আমাদের জানালে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না। আমরা তাকে দৃষ্টির আড়াল হতে দিতাম না।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খাঁন বলেন, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্কুল ছাত্রী নাবিলা এবং কলেজ ছাত্র ইমরানের আত্মহত্যার বিষয়টি প্রেমর কারণেই ঘটেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই দুটি নিষ্পাপ প্রাণ অকালে ঝরে গেল। এ জন্য সন্তানদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি ঘটনায় পৃথকভাবে মঙ্গলবার ও বুধবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password