ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ঠেকান করোনাভাইরাস

ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ঠেকান করোনাভাইরাস
MostPlay

শরীরে তো জীবাণুর মেলা৷ কোটিতে, অর্বূদে তারা ছড়িয়ে রয়েছে শরীরের কোণে কোণে৷ তারা যদি সচেষ্ট হয়, বা বলা ভাল, আমরা তাদের সচেষ্ট করে তুলতে পারি, তারাই করোনাকে গোল দিয়ে দেবে গুণে গুণে৷ ভ্যাকসিন কবে আসে না আসে, তার তো কোনও ঠিক নেই!

গোলমেলে কথা! তাহলে শুনুন, ব্যাকটেরিয়া মানেই যে ক্ষতিকর, এমন কিন্তু নয়৷ আমাদের শরীরে এমন অনেক জীবাণু আছে, উপকারি জীবাণু, যাদের দৌলতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন চাঙা থাকে, থাকে নিয়ন্ত্রণেও৷ আর প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙা থাকা মানে, যে কোনও সংক্রমণ, তা সে নভেল কোরনা হোক কি অন্যকিছু, থাকে দূরে দূরে৷ এমনকী বাঙালীর যে চিরন্তন পেটের অসুখ, মুটিয়ে যাওয়া, তা কমানোর মন্ত্রও লুকিয়ে আছে এই সব ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে৷

তা সে না হয় হল, একা জীবাণুই না হয় করোনা, পেটের অসুখ, ওজন বৃদ্ধি, সবের সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দিল, সঙ্গে কমালো ক্রনিক রোগের প্রকোপ বা আশঙ্কা, সে তো বিরাট সুখবর, কিন্তু সে আবার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে কেন? প্রতিরক্ষা যত জোরদার, ততই তো মঙ্গল!

ভুল৷ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা যেমন ক্ষতিকর, অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াও বিপজ্জনক৷”, জানালেন লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক টিম স্পেক্টার৷ “ক্ষতিকর কিছুর সন্ধান পেয়ে শরীরের প্রতিরোধশক্তি যদি অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠে, সব কিছু ভুলে তাকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লাগে, এমন কিছু রাসায়নিকের ক্ষরণ হয় যা থেকে ফুসফুসের চরম ক্ষতি হয়ে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ফেলিওর হতে পারে৷ আক্রান্ত হতে পারে শরীরের অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গও৷ মাল্টিঅরগ্যান ফেলিওর হতে পারে তাঁর৷ রোগী মারাও যেতে পারেন৷ সেজন্য প্রতিরোধশক্তি বেশি বাড়ানোর চেষ্টা না করে তাকে চাঙা রাখাই হল আসল কাজ৷ এ কাজে গাট মাইক্রোবের ভূমিকা বিরাট৷”

সতি্যই তো৷ প্রতিরোধ শক্তির উপর যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকত, যদি সে বাড়ত বেলাগাম, ভাল জীবাণুদেরও কি সে বাঁচতে দিত! দিত না৷ তাই ভাল গাট মাইক্রোবেরা নিজেদের স্বার্থেই তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যায়৷ যার ভাল প্রভাব পড়ে শরীর জুড়ে৷

 

গাট মাইক্রোব কী ও কেন

পাকস্থলি থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত গাট মাইক্রোবের রমরমা৷ এই তাদের ঘরবাড়ি ও কর্মস্থল৷ সবচেয়ে বেশি ভিড় সিকাম-এ৷ তো জীবাণুদের এই সমাজে ভাল-র পাশাপাশি থাকে মন্দরাও৷ ভাল-র সংখ্যা যখন বাড়ে, আমরা ভাল থাকি, মন্দরা বাড়লে তছনছ শুরু হয়৷ আবার শুধু সংখ্যা বেশি হলেও হয় না, কত ভিন্ন প্রজাতির ভাল জীবাণু আছে তার উপরও নির্ভর করে আমাদের ভালথাকা-মন্দথাকা৷ কাজেই ভাল জীবাণুর সংখ্যা ও বৈচিত্র বাড়ানোর চেষ্টা করে যাওয়া উচিত নিরন্তর৷ বিশেষ করে এই সময়, যখন নভেল করোনার ভয়ে আমরা গৃহবন্দী, ভেবে পাচ্ছি না, কীভাবে তার হাত থেকে মুক্তি পাবো৷

 

গাট মাইক্রোব বাড়ান

অধ্যাপক স্পেক্টার জানিয়েছেন, “বয়সের সঙ্গে অন্তে্র ভাল জীবাণুর বৈচিত্র কমতে থাকে৷ অনিয়মে কমে ভাল সংখ্যাও৷ বাড়ে খারাপ জীবাণু৷ আরও নানান কারণের সঙ্গে এই কারণেও বয়ষ্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়৷ খুব বেশি অনিয়ম করলে কম বয়সেও এই একই বিপত্তি ঘটে৷ ফলে কঠিন হয়ে যায় কোভিড ১৯-এর সঙ্গে লড়া৷ বিভিন্ন সাপলিমেন্ট খেয়ে অনেকে এই বিপদ কাটানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তাতে কতটা কাজের কাজ হয় সন্দেহ আছে৷ কাজেই সঠিক খাবার খেয়ে ও নিয়ম মেনে গাট মাইক্রোবদের বৈচিত্র ও সংখ্যা ঠিক রাখার চেষ্টা করুন৷”

 

খাদ্য ও জীবনযাপন

·        মিষ্টি, ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করে খান উপকারি ফ্যাট ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার৷ অর্থাৎ সোজা কথায়, চিনি, মিষ্টি, লুচি-পরোটা-চিপস-কাটলেট থেকে শুরু করে সব রকম ভাজাভুজি, বনস্পতিতে ভাজা হলে তো কথাই নেই, যে কোনও প্রসেস করা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করুন৷ চিজ-ডিমের কুসুম-তেল-ঘি-মাখনে রাশ টানুন৷ তার বদলে খান নানা রকম শাক-সবজি-ফল, সব রকম বাদাম৷ কুমড়ো, সূর্যমুখী, তিষি ইত্যাদির বীজ খান৷ ময়দার রুটির বদলে খান গমের আটা বা গম-জোয়ার-বাজরা-রাগি ইত্যাদির আটা মিশিয়ে বানানো রুটি৷ পালিশ করা চাল-ডালের বদলে খান ব্রাউন রাইস, খোসাওলা ডাল৷ খান রাজমা, ছোলা, বিনস৷

·        আর্টিফিসিয়াল সুইটনার, যেমন, অ্যাসপারটেম, স্যাকারিন না খাওয়াই ভাল৷

·        কোল্ডড্রিঙ্কের সঙ্গে প্যাকেটের ফলের রস, আইস টি মিক্স বাদ দিতে পারলে ভাল৷

·        পলিফেনলসমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট, গ্রীন টি, রেড ওয়াইন ভাল৷ অল্পস্বল্প খেতে পারেন৷

·        অন্তে্র সরাসরি ভাল জীবাণুর যোগান দিতে টক দই, ইয়োগার্ট, কেফির নামের ঘোল, কমবুচা নামের এক ধরনের গেঁজানো কালো বা সবুজ চা, ল্যাকটিক অ্যাসিডে গেঁজানো বাঁধাকপি, যাকে সটেক্র্যাট বলে, গ্যাঁজানো সয়াবীন বা টেম্ফ, নুন জলে ভেজানো টকে যাওয়া শশা ইত্যাদি খেতে পারেন৷ তবে এখন নতুন করে কোনও কিছু যোগার করা কঠিন৷ কাজেই টক দই বা ইয়োগার্ট নিয়মিত খান৷

·        একটু কম খান৷ মাঝে একবার কি দু-বার ১২ কি ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকুন৷

·        খাওয়ার সময় ও ধরন মোটামুটি ঠিক রাখুন৷

·        ঘুমের অনিয়ম করবেন না৷ মাত্র দু-সপ্তাহ কম ঘুমোলেই অন্তে্র জীবাণুর বিন্যাসে রকমফের হতে পারে বলে জানা গেছে৷

·        নিয়মিত শরীরচর্চা করুন৷

·        কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না৷ যাঁরা কথায় কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খান, তাঁদের অন্তে্র ভাল-মন্দ সব জীবাণুরাই মরে দলে দলে৷ অন্ত্র তখন সামান্য কিছু জীবাণুর দখলে চলে যায়৷ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে৷

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password