খাবার খাইয়ে কাকদের কাছ থেকে উপহার পাচ্ছে শিশু

খাবার খাইয়ে কাকদের কাছ থেকে উপহার পাচ্ছে শিশু
MostPlay

আট বছরের শিশু গ্যাবি ম্যান চার বছর ধরে তার এলাকার কাকেদের খাবার খাইয়ে আসছে। তার বিনিময়ে কাকেদের কাছ থেকে নিয়মিত উপহার পেয়ে আসছে সে!

 

ওয়াশিংটনের সিয়াটলের বাসিন্দা গ্যাবির পাওয়া উপহারের মধ্যে রয়েছে পুতি, মসৃণ পাথর, লেগো, ধাতব বস্তু, পেপার ক্লিপ, বোতাম এবং ফোমের টুকরা। বিশেষত চকচকে, বর্ণিল, মুখে বহনযোগ্য কোনো কিছুকে কাকরা গ্যাবির কাছে দিয়ে যায়। 

গ্যাবি প্রতিটি জিনিস ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং উপহার পাওয়ার দিন-তারিখসহ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে রেখেছে।

ছোটবেলায় গ্যাবির খাবার ফেলে দেওয়ার অভ্যেস ছিল। একদিন গাড়ি থেকে নেমে একটি চিকেন নাগেট ফেলে দেওয়ার পর দেখা গেলো অনেকগুলো কাক এসে সেটি নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। তারপর থেকে সে তার যাওয়া-আসার পথে গাড়ি থেকে নেমে কাকেদের খাবার দিতে শুরু করে। কাকেরা যখন বুঝে ফেলল গ্যাবি প্রতিদিন খাবার দিয়ে যায় তাই তারা তার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করল এবং দেখা গেলে গ্যাবি এবং তার ভাইয়ের অধিকাংশ টিফিন কাকেরা খেয়ে ফেলছে। তবে তাদের মা এতে অখুশী নন বরং অল্প সময়ের মধ্যে পুরো পরিবার কাকেদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে উঠল।

প্রতিদিন সকালে গ্যাবি এবং তার মা তাদের বাড়ির পেছনের উঠানে কাকেদের জন্য বাদাম ও কুকুরের জন্য তৈরি খাবার রেখে যায় এবং চৌবাচ্চার পানি বদলে দিয়ে যায়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে কাকেদের মধ্যে উপহার নিয়ে আসার অভ্যাস শুরু হয়।

গ্যাবির সবচেয়ে পছন্দের উপহারটি হলো হৃদয় আকৃতির একটি মুক্তো-বর্ণের পুতি। আরেকটি পছন্দের উপহার হলো একটি ধাতব খন্ড যার উপরে লেখা ‘best’। গ্যাবি মনে করে প্লেটের আরেকটি টুকরা কাক নিজের কাছে রেখে দিয়েছে যার গায়ে লেখা ‘friend’।

উপহারের তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও রয়েছে। একবার গলির মাথায় ছবি তুলতে গিয়ে গ্যাবির মা লিসা তার লেন্সক্যাপটি হারিয়ে ফেলেন। পরে একটি কাক এসে ক্যাপটি দিয়ে যায়। তিনি প্রথমে নিশ্চিত ছিলেন না কাকই ক্যাপটি নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাড়িতে পাখি দেখার জন্য লাগানো ক্যামেরার ভিডিওতে তিনি দেখতে পান একটি কাক ক্যাপটি নিয়ে এসে চৌবাচ্চার পানিতে বার বার চুবিয়ে নিচ্ছে। 

অবশ্য উপহারের সব জিনিসই যে খুব চমৎকার তা নয়। একবার একটি কাক পচতে থাকা কাঁকড়ার দাঁড়া নিয়ে এসেছিল।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রানী বিভাগের অধ্যাপক জন মারজলুফ গ্যাবির ঘটনার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি আপনারা কাকের সাথে বন্ধন তৈরি করতে চান তাহলে তাদের নিয়মিত সেবা করে যান।

মারজলুফ একজন কাক বিশেষজ্ঞ এবং কাকেদের নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, কাকের সাথে ভালো আত্মীয়তা তৈরি করা খুবই সম্ভব, তবে তারা যে উপহার নিয়ে আসবেই সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তিনি অন্যান্য লোকেদেরও কাকের কাছ থেকে উপহার পেতে দেখেছেন যদিও নিজে কখনো পাননি।

উপহারগুলো সবসময় সুন্দর ও চকচকে হয় না। মারজুফলার বলেন, তিনি অনেক সময় মানুষের কাছে মৃত বাচ্চা নিয়ে আসতে দেখেছেন কাকেদের।

পাখিদের মধ্যে কাকেদের বুদ্ধিমত্তা চমকপ্রদ। আমরা অনেকেই ছোটবেলায় কলসির পানিতে কাকের পাথর ডুবিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে পানি পানের গল্প পড়েছি। এই গল্প কতটা সত্য তার নিশ্চয়তা না থাকলেও বাস্তবেই কাকেরা বুদ্ধি খাটিয়ে অনেক কাজ করে। এদের বুদ্ধিমত্তাকে সাত বছরের মানব শিশুর বুদ্ধিমত্তার সমতুল্য মনে করা হয়। গবেষণাগারে এদের জটিল ধাঁধার সমাধান করে এবং টুল ব্যবহার করে খাবার বের করে খেতে দেখা গেছে। জাপানের টোকিওর রাস্তায় কাকেরা লাল বাতির জন্য অপেক্ষা করে।

গাড়ি থেমে গেলে তারা গাড়ির চাকার নিচে ওয়ালনাট রেখে যায়। গাড়ি চাপা দিয়ে সেগুলো ভেঙ্গে দিলে তারা ভেতরের বাদাম খেয়ে নেয়। জাপানে একবার একজন যাত্রীর ক্রেডিটকার্ড তুলে নিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে একটি কাককে!

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password