ট্রলিব্যাগে দেহ, স্ত্রীর প্রতি ‘বিশ্বস্ত’ থাকতে খুন প্রেমিকাকে

ট্রলিব্যাগে দেহ, স্ত্রীর প্রতি ‘বিশ্বস্ত’ থাকতে খুন প্রেমিকাকে
MostPlay

স্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে অন্য সম্পর্কে জড়িয়েছিল সে। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি যে সে বিশ্বস্ত, তা প্রমাণ করতে প্রেমিকার দেহ হাজির করেছিল স্ত্রীর সামনে। ‘খুনি’ স্বামীকে বাঁচাতে তার প্রেমিকার দেহ লোপাটে হাত লাগিয়েছিল স্ত্রীও। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের জালে ধরা পড়ল স্বামী-স্ত্রী। এগরা থানার পুলিশ পাকড়াও করেছে তাদের দুই নিকটাত্মীয়কেও।

এগরায় ট্রলি ব্যাগে মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। নিহত মহিলা অনিতা দাসের (৩০) পরিচয় উদ্ধারের পর  একের পর এক তথ্য পুলিশের হাতে আসে। সেই ঘটনায় দমদম থানার পুলিশের সাহায্যে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা সৌরভ দে-কে রবিবার রাতে গ্রেফতার করে এগরা থানার পুলিশ। একে একে ধরা হয় সৌরভের স্ত্রী মৌমিতা দে এবং মৌমিতার বাবা নারায়ণচন্দ্র শী-কে। নারায়ণের আত্মীয় রমাকান্ত জানা নামে এক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সকলেই অনিতার দেহ লোপাটে জড়িত। কাঁথি মহকুমা আদালতের বিচারক সৌরভকে ১০ দিন এবং বাকি তিনজনকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

খুনের মোটিভ নিয়ে এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট না হলেও  দমদম থানা সূত্রে খবর, অনিতা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সৌরভকে বিয়ের জন্য নিয়মিত চাপ দিচ্ছিলেন। সৌরভ পুলিশকে জানিয়েছে, অনিতা তাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেছিল। তার থেকে মুক্তি পেতেই অনিতাকে খুন করে অটোচালক সৌরভ।

৯ মার্চ সকালে এগরা থানার দিঘা মোড় ও দোবাঁধি সড়কের আলামচকে কালভার্টের নীচে ট্রলিব্যাগ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছিল অনিতার দেহ। দিনকয়েক পরে পুলিশ তার পরিচয় জানতে পারে। এগরা থানার পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে জানতে পারে সৌরভ-সহ ধৃতরা ওই ট্রলি ব্যাগ খালে ফেলে যায়। সূত্র মারফত অভিযুক্তদের বিষয়ে তথ্য জোগাড় করে পুলিশ। তাতেই সৌরভের নাম উঠে আসে। সৌরভের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দমদম ক্যান্টনমেন্টের নতুনবাজারে। তার স্ত্রী মৌমিতা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে এগরায় ভাড়া বাড়িতে থাকত। অনিতাও দমদম ক্যান্টনমেন্টে ক্ষুদিরাম পল্লিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পুলিশকে সৌরভ জানায়, অনিতাকে রাখার জন্য বাড়িটি সে-ই ভাড়া নিয়েছিল। অনিতার বাপের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনারই বারাসতে। তাঁর স্বামী ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা, পেশায় রিক্সাচালক সোমনাথ দাস। তাঁদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। সৌরভের জন্যই এক সময় অনিতা সোমনাথকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সোমবার কাঁথি থানায় এসেছিলেন সোমনাথ।

অনিতার ভাইয়ের স্ত্রী অমৃতা দাস বলেন, ‘‘ননদকে সৌরভের সঙ্গে মেলামেশা করতে একাধিকবার বারণ করেছিলাম। ও শোনেনি।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে অনিতা দাবি করেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তার পর থেকে তাঁকে বিয়ে করার জন্য সৌরভকে চাপ দিচ্ছিলেন তিনি। তা নিয়ে গোলমাল হওয়ায় বাপের বাড়ি চলে যান অনিতা। ৮ মার্চ তাঁকে বেদিয়াপাড়ার ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনে সৌরভ। শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করে সে। পরে নিজের বাড়িতে ফিরে মৌমিতাকে সব জানায়।

দমদম থানার পুলিশ জানিয়েছে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন সংলগ্ন ব্যাগের দোকান থেকে ট্রলিব্যাগটি দু’দিনের জন্য ভাড়া নেয় সৌরভ। তাতেই অনিতার দেহ পুরে একটি গাড়ি ভাড়া করে ট্রলিব্যাগটি নিয়ে এগরায় আসে সৌরভ। গাড়িতে ছিল মৌমিতাও। সৌরভ পুলিশের কাছে দাবি করেছে, মৌমিতাই তাকে অনিতার দেহ এগরায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। দমদম থানার পুলিশ জানায়, খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের বাইরে সৌরভের বাবার রুটির দোকান রয়েছে। তার বাবাকে রুটির অর্ডার দেওয়ার জন্য পুলিশ একটি বাড়িতে ডেকে পাঠায়। তাঁর কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে স্টেশন সংলগ্ন স্ট্যান্ডে অটো চালায় সৌরভ। সেই মতো সেই স্ট্যান্ডে যাত্রী সেজে সৌরভকে পাকড়াও করে পুলিশ।

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে সবকিছু জানার চেষ্টা করা হবে। মহিলাকে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।’’

 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password