তাঁদের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই

তাঁদের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই
MostPlay

‘আমি শিওর, একদিন ক্যানসারমুক্ত পৃথিবী হবে।’ হুমায়ূন আহমেদ এ কথা বলেছিলেন নাসির আলী মামুনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। কর্কট রোগের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের সময়টায় অনেক লেখাতেই তিনি তাঁর রোগ নিয়ে লিখেছেন নানা কথা। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর অনুভূতি, তাঁর মানসিক চাপের কথাও। কিন্তু এই রোগ লেখককে ভাঙতে পারেনি। ক্যানসারের কাছে হার মানলেও এই নন্দিত কথাসাহিত্যিক মারা যান একটি ক্যানসারমুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন চোখে নিয়ে।


এই কর্কট রোগটা হুমায়ূন আহমেদের মতো আমাদের আরও অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্বের জীবনকে সংকটে ফেলেছে। অনেকে এই সংকট উতরে জয় করেছেন ক্যানসারকে, অনেকে আবার ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তে হার মেনেছেন জীবনের কাছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ বলিউডের সবার প্রিয় ইরফান খান। এছাড়াও এই রোগে বাংলাদেশের অভিনেত্রী দিতি, সংগীতশিল্পী লাকী আখান্দ, শাম্মী আখতার, নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম খোকন, অভিনেতা চ্যালেঞ্জারের মতো চেনাজনদের চলে যাওয়া এখনো দর্শক-শ্রোতাদের মনে ক্যানসারকে এক ভয়ংকর খলনায়কের ভূমিকায় আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে। যেন একে হার মানানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, সংগীত পরিচালক আলম খান, ভারতের মনীষা কৈরালার ক্যানসার জয় কিংবা অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন আর সংগীতশিল্পী ফুয়াদের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের সাহসী চেষ্টা অনেককে অনুপ্রাণিত করে।


ইরফানের প্রায় কাছাকাছি সময়ে বলিউড অভিনেত্রী সোনালী বেন্দ্রেও নিজের শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার বিষয়টি জানিয়েছেন সবাইকে। ইরফান চলে গেলেও লড়াই করে যাচ্ছে সোনালী। সোনালীর ভাষ্যে, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য দ্রুত চিকিৎসার পাশাপাশি প্রচণ্ড মানসিক শক্তিরও প্রয়োজন, প্রয়োজন ভালোবাসা ও প্রার্থনার।
এখনো অভিনেতা আলী যাকের, অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন, সংগীতপরিচালক ফুয়াদ আল মুক্তাদির ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। তবে এই প্রক্রিয়াকে তাঁরা অনেকেই আলোচনায় আনতে চান না। কারণ হিসেবে অনেকে বলেন, চিকিৎসার এই প্রক্রিয়া ও সময়টা একজনের জীবনকে দুমড়ে-মুচড়ে রেখে দেয়। শুধু একজন নয়, এই রোগের প্রভাব পড়ে পুরো পরিবারের ওপর। কিন্তু রোগটিকে যখন জয় করে আসেন একজন, তখন সেটা অনুপ্রেরণা আর দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায় সবার জন্য। নিজের ক্যানসার-যুদ্ধ নিয়ে বলিউড অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা বলেছেন, ‘সুখকর চিন্তার মধ্যে থেকে লড়তে হবে ক্যানসারের সঙ্গে।

লুকিয়ে নয়, লড়াই করতে হবে সবার সামনে এসে। যা ভালো লাগে তাই করে জীবনটাকে উপভোগ করতে হবে। এভাবেই চিকিৎসার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এমনটা বলতেন আমাদের হুমায়ূন আহমেদও।তিনিও তাঁর মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য নিউইয়র্কে ক্যানসারের চিকিৎসা চলার সময় হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম আর কাগজ। কর্কট রোগটি সে সময় এক নতুন চরিত্র হয়ে তাঁর নানা লেখায় জায়গা করে নিয়েছিল। তাই এখনো নতুন করে যখন কোনো চেনাজন এই রোগের কবলে পড়েন, তখন ঘুরেফিরেই হুমায়ূন আহমেদের সেই যুদ্ধদিনের কথা তাঁর পাঠকদের মনে পড়ে যায়।
এক জীবনঘাতী রোগ হয়তো আজ ইরফানকে নিয়ে গেছে। তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টির মাঝে। শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই। এমন অকালে চলে যাওয়া তারকারাও বেঁচে থাকবেন আরও বহু বহু দিন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password