করোনাভাইরাসের ধাক্কায় যুগের সর্বোচ্চ মন্দার মুখে বিশ্ব অর্থনীতি

করোনাভাইরাসের ধাক্কায় যুগের সর্বোচ্চ মন্দার মুখে বিশ্ব অর্থনীতি
MostPlay

নতুন করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে করে বিশ্বে আরেকটি অচলাবস্থা আসন্ন। জাপানে এক মাসের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডে জনসমাগম নিষিদ্ধ আর ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিতে এখন।

যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক রবার্ট ডিঙ্গোয়াল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘চোদ্দ শতকে ইউরোপে ‘ব্ল্যাক ডেথ’র কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকটি বৈশ্বিক মহামারির পরপরই অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। আমি মনে করছি না যে এবার এমন কোনো ভালো কারণে আছে, যার জন্য এটা এবার হবে না।’

 

তবে বৈশ্বিক এই মহামারি ছড়ানোর অনেক আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছিল, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর এবং নানামুখী ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের আরও আশঙ্কা, যদি উল্লিখিত এসব ঝুঁকির মধ্যে কোনো একটিও বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পাবে।

অর্থনীতিবিদরা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, করোনাভাইরাস এমন একটি ধাক্কা দিতে পারে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও প্রতিদিনই এটা বিস্তার লাভ করছে। চীনের মধ্যাঞ্চল থেকে গোটা দেশ এবং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। গত ডিসেম্বরে চীনের এই মধ্যাঞ্চল থেকেই এর বিস্তার শুরু।

জানুয়ারি থেকে চীনে উৎপাদন কারখানা বন্ধ এবং শহরগুলো অবরুদ্ধ। সৌদি আরব বিদেশিদের মক্কা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাতিল করেছে ওমরাহ ভিসা। এদিকে জেনেভায় বিশ্বের গাড়ি শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল মোটর শো’ বাতিল হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাতিল হয়েছে ঘড়ি মেলা ‘ব্যাসেলওয়ার্ল্ড’।

ইতালিতে ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে কিন্তু গ্যালারিতে কোনো দর্শক নেই। এদিকে আগামী জুলাইয়ে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমসের ভাগ্য এখনও ঝুলে আছে করোনার ওপর। এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮৫ হাজারের বেশি দাঁড়িয়েছে আর মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯২৩ জনের।

সবার নজর এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। যদিও দেশটিতে এখনও করনোভাইরাস সেভাবে আঘাত হানতে পারেনি কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, একটি মহামারি অবশ্যম্ভাবী। যদি বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশে অতিরিক্ত সতর্কতা জারি হয়, বিশেষ করে মার্কিন গ্রাহকদের জন্য, তাহলে এটা হবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক এক ঘা।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যমের অতিশয়োক্তিকে দায়ী করলেও অন্যরা এই মহামারির প্রকৃত প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত। অক্সফোর্ড ইকোনোমিকস গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ গেগরি ডাকো বলছেন, ‘যদি সেখানে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বের জন্য এর প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক।’

বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এটার খুব মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর এটা ঘটলে খুব শিগগিরই অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়বে অর্থনীতি এবং এই সংকট আর্থিক বাজারের আতঙ্ককে তরান্বিত করবে। এদিকে চলতি সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিটে যে দরপতন হয়েছে তা ২০০৮ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ।

উৎপাদন কমানো ছাড়াও স্কুল বন্ধ অথবা টেলেযোগাযোগ খাতে কর্মীদের কাজ ও খরচে বাধা তৈরি করেছে যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুই তৃতীয়াংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় এশিয়া আর ইউরোপের শেয়ার বাজারগুলো বেসামাল। মার্কিন-চীন বাণিজ্য চুক্তির আভাস বিশ্ব অর্থনীতিকে গতির সম্ভাবনা দিলেও করোনার কারণে ফের উদ্বেগ এখন চরমে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ জনের করোনো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে—এরমধ্যে শুধু তিনজন অন্যদেশে ভ্রমণ না করেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কবলে পড়েন। ওয়াশিংটনে বিভিন্ন সম্মেলনগুলোতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাতে অনিচ্ছুক, কেউ কাশি দিলে সবাই তাকিয়ে থাকছেন এবং মার্কিনরা তাদের বিদেশ ভ্রমণ আপাতত স্থগিত করেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যদি হাঁচি দেয় তাহলে গোটা বিশ্বের নাকি তাতে ঠান্ডা লাগে। এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ চীনের কারণে আইএমএফ ইতোমধ্যে ২০২০ সালে প্রাক্কলিত বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে এনেছে কিন্তু তবে তারা এটা করেছিল মহামারি এই ভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আগেই।

চলতি সপ্তাহে আইএমএফ-এর মুখপাত্র গেরি রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরও অনেক কিছুই আছে যা আমরা জানি না। এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা এখনও এটা সম্পর্কে জানান চেষ্টা করছি। আগামী বসন্তে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ-এর যে উপ-আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মুদ্রা তহবিল।

কেননা ওই বৈঠকে গোটা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেবে কিন্তু এটা ধারণা করা হচ্ছে যে ওয়াশিংটনে যেভাবে তারা এই বৈঠকের আয়োজন করে থাকে এবার হয়তো সেভাবে তা হবে না। পরিস্থিতি কোনোদিকে যাচ্ছে তা বোঝা না গেলেও বৈশ্বিক অর্থনীতি গত একযুগের মধ্যে যে সর্বোচ্চ সংকটে এ নিয়ে একমত অর্থনীতিবিদরা।

বিডিটাইপ সংবাদের লেখক হতে পারেন আপনিও। আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, ক্যাম্পাসের খবর, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা পাঠান: [email protected] ই-মেইলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password