দিল্লি ছাড়ছেন আতঙ্কিত মানুষজন

দিল্লি ছাড়ছেন আতঙ্কিত মানুষজন
MostPlay

ভারতের রাজধানী দিল্লি এখন রণক্ষেত্র। তিনদিনের ধর্মীয় সহিংসতায় ইতোমধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির এলাকাগুলোর অনেক বাড়িঘর-দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় নাশকতার এই আগুন থেকে বাদ পড়েনি মসজিদ-মাজারও। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষজন।

দিল্লির সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি এবং অতিরিক্ত পুলিশ ও আধাসামরিক জওয়ান মোতায়েন করায় আজ বুধবার নতুন করে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সরকারের উপর মহল থেকে দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ আসায় এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদ এলাকার মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষজন ফের সহিংসতার আশঙ্কায় ব্যাগ-বস্তা নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ধর্মীয় এই সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, সহিংসতার সময় হিন্দুত্ববাদী হামলাকারীদের উৎসাহ দিয়েছে তারা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দিল্লির ধর্মীয় সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ নিজের ঘরকেও আর নিরাপদ মনে করছেন না। সহিংসতা এই উত্তেজনায় তারা বাড়িঘর রেখে দিল্লি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শুধু মুসলিম নয় এই তালিকায় আছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও।

ধর্মাবলম্বীরাও।

Delhi-1

তারা মোহাম্মদ আসিফ খান নামের এক টুইটার ব্যবহারকারীর পোস্ট করা ভিডিও তাদের প্রতিবেদনে সংযুক্ত করে দিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ মিলে হাতে-কাঁধে আর মাথায় ব্যাগ পোটলা নিয়ে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। এমন দৃশ্য দেখা গেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সবগুলো এলাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লির এক মুসলিম বাসিন্দা ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিতে দিতে তারা আসে এবং সবকিছু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তারপর তারা দোকানপাট থেকে সব মালামাল লুট করে তাতেও আগুন দেয়ার পর মসজিদ তার পাশের দুটি বাড়িতে আগুন দেয় দলবেধে।’

এদিকে আজ বুধবার দিল্লির চাঁদবাগ এলাকার একটি ড্রেন থেকে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গতকাল এক পুলিশ কর্মকর্তাও সহিংসতার কবলে পড়ে প্রাণ হারান। এছাড়া একই পরিবারের তিনজনসহ মোট ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্যান্ট খুলে ধর্ম যাচাইসহ নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে সাংবাদিকদের।

Delhi-2

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ঘটনাকে ভীতিকর হিসেব অভিহিত করে সহিংস এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মাবল্বী প্রায় ৫০০ তরুণের একটি দল অশোকনগর এলাকার একটি মসজিদে আগুন দিয়ে তার মিনারে হনুমানের পতাকা ঝুলিয়েছেন।

বিবিসি বলছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জাতিগত এই সহিংসতায় বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এদিকে এই দাঙ্গার দায় কাঁধে নিয়ে বিজেপি দলীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লির এই সহিংসতার জেরে বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্ধ রয়েছে রাজধানী শহরটির প্রায় সব সরকারি স্কুল। রায়ট গিয়ারে ফ্ল্যাগমার্চ (দাঙ্গা বিরোধী অবস্থান) দিচ্ছেন আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান ও দিল্লি পুলিশ। দেখামাত্রই গুলি অর্থাৎ ‘শুট অ্যাট সাইটের’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password