হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, থামছে না মুমূর্ষু রোগীর হাহাকার

হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, থামছে না মুমূর্ষু রোগীর হাহাকার
MostPlay

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা মুমূর্ষু রোগীর হাহাকার থামছেই না। প্রতিদিনই চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন রোগী। ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। প্রিয় স্বজনকে বাঁচাতে চলে প্রাণান্তকর চেষ্টা। তবুও এতটুকু চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না তারা। মিলছে না অক্সিজেন, আইসিইউ কিংবা সাধারণ একটা শয্যা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের বাসিন্দা জিয়াউল করিমের স্ত্রী জেবুন্নেছার (৪৮) করোনাভাইরাস টেস্টের রিপোর্ট না থাকায় গত রবিবার সারারাত চেষ্টা করেও চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। এরপর তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে সারা রাত অপেক্ষায় ছিলেন। সোমবার সকালে বিনা চিকিৎসাতেই অ্যাম্বুলেন্সে ছটফট করে মারা যান চার সন্তানের এ জননী। 

জিয়াউল করিম বলেন, ‘পরিবারের সবার করোনার উপসর্গ থাকায় টেস্ট না করে ১ জুন থেকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করি। অন্য সবাই সুস্থ হওয়ার পথে থাকলেও স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হয়। গত রবিবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসায় চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। রবিবার রাত থেকেই চমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও তাকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করতে পারিনি। প্রায়  সব হাসপাতাল বলছে করোনাভাইরাস টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া রোগী ভর্তি করা হবে না।’

অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক নারু গোপাল চক্রবর্তী (৬৯) চট্টগ্রামের বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। গত শুক্রবার তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলে সিএসসিআর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। সেখানে চিকিৎসক রোগীকে এক্সরে করতে বলেন। এ সময় তার ছেলে দেবাশীষ চক্রবর্তী প্রয়োজনে অক্সিজেন ও আইসিইউ বেডের সুবিধার ব্যাপারে কথা বলেন সিএসসিআরের সঙ্গে। ওইদিন বিকালে নারু গোপাল চক্রবর্তীর শ্বাসকষ্ট বাড়লে সিএসসিআর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় তাকে এক্সরে রুমে নেওয়ার পর ছেলেরা অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে বারবার অনুরোধ করে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা শুনেনি। পরে অক্সিজেন ও আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মারা যান তিনি। 

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা যদি হাসপাতালে গিয়েও বিনা চিকিৎসায় মারা যান, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এটা সম্পূর্ণ অমানবিক।’

বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিতে গঠিত ভিজিল্যান্স টিমের প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপালগুলোকে প্রতিনিয়তই বলা হচ্ছে যে, শয্যা খালি থাকলে যেন কোনো রোগীকে বিনা চিকিৎসা ফেরত দেওয়া না হয়। এর পরও নানাভাবে রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ আসছে। এটা অন্যায়। আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে, এটি চলবে।’ 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password