গুলি করে ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত ছাত্রলীগ-যুবলীগ

গুলি করে ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত ছাত্রলীগ-যুবলীগ
MostPlay

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বল্লায় গত মাসে পোস্টমাস্টারকে গুলি করে ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।ওই ঘটনায় গ্রেফতার ও আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ নেতা তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসান। ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারের চিঠি কেন্দ্রে পাঠিয়েছে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ, আর যুবলীগে চলছে তদন্ত।গ্রেফতারকৃত- তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসান টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত. জহিরুল ইসলামের ছেলে।

জানা যায়, গত (১৭ মে) কালিহাতী পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের ৫০ লাখ টাকা তোলেন বল্লা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার মুজিবর রহমান (৫১)। পরে অফিসের রানার রফিকুল ইসলামকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বল্লা পোস্ট অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুরে বল্লা তাঁত বোর্ডের কাছে পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন দূর্বৃত্ত এসে তাঁদের পথ আটকান। এ সময় পোস্ট মাস্টার মুজিবর রহমানের পায়ে গুলি করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।

এ ঘটনায় ওই দিনই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে কালিহাতী থানায় মামলা করেন পোস্ট অফিসের পরিদর্শক শেখ হোসেন জোবায়ের। পরে এ ঘটনায় সন্দেহজনক তিনজন উপজেলার বল্লা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত. কামরুল রশিদ আশরাফীর ছেলে রনী আশরাফী, বল্লা গোরস্থান পাড়ার হাসু মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, সাতুটিয়া গ্রামের আমীর হামজার ছেলে শান্তকে আটক করে আদালতে পাঠায় কালিহাতী থানা পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানান, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জেলা ছাত্রলীগ নেতা তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসান বলেন, এ ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনা করেন কালিহাতী উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ওরফে সজীব। ঘটনার দিন জিসান ও সজীবের সহযোগী যুবলীগকর্মী রিপন বল্লা পোস্ট অফিস এলাকায় অবস্থান নেন। পোস্টমাস্টার মুজিবর রহমান টাকা তুলতে কালিহাতীর উদ্দেশ্যে রওনা হলে জিসান ও রিপন মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁদের অনুসরণ করতে থাকেন। টাকা তুলে পোস্টমাস্টার রওনা দিলে মোবাইলে জিসান সজীবকে তথ্যটি জানায়। পরে ওই টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার পরিদর্শক তদন্ত ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহজনক তিনজন কালিহাতী উপজেলার বল্লা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত, কামরুল রশিদ আশরাফীর ছেলে রনী আশরাফী, বল্লা গোরস্থান পাড়ার হাসু মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, সাতুটিয়া গ্রামের আমীর হামজার ছেলে শান্তকে আটক করে আদালতে পাঠান তারা। মামলাটির ছায়া তদন্ত তিনি করলেও বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি দক্ষিণ) পুলিশ।

কালিহাতী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুন্নবী সরকার বলেন, বল্লায় পোস্টমাস্টারকে গুলি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জেলা ছাত্রলীগ নেতা জিসানের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উপজেলা শাখার ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ওরফে সজীবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা যুবলীগ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার এর তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শাখায় পাঠানোর কথা জানান তিনি।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, বল্লা পোস্ট অফিসের ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসানের বহিষ্কার দাবিতে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাকে স্থায়ী না সাময়িক বহিষ্কার করা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউর রহমান চঞ্চল বলেন, কালিহাতী উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজীবের নির্দেশে বল্লা পোস্ট অফিসের ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, এমন তথ্য আদালতে দিয়েছে এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জেলা ছাত্রলীগ নেতা তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসান। বিষয়টি দ্রুত তদন্তের জন্য কালিহাতী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আর সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যদি তার সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে অবশ্যয় জেলা যুবলীগের ভাবমুর্তি রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি দক্ষিণ) পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত সময়ের কন্ঠস্বর’কে জানান, বল্লা পোস্ট অফিসের ৫০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় এর তদন্তের দায়িত্ব পান তারা। ওই ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটনে আর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করেন তারা।পরে, গত (২১ মে) ঘটনায় সরাসরি জড়িত টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য তানজিদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে টাঙ্গাইল শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় গ্রেফতারকৃত জিসানের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ২ লাখ টাকা পান বলেও তিনি জানান। পরদিন (২২ মে) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জিসান। এরপর টাঙ্গাইল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রূপম কুমার দাশ তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password