হামলায় নেতৃত্বদানকারীদের নাম লিখে ভিপি নুরের স্ট্যাটাস

হামলায় নেতৃত্বদানকারীদের নাম লিখে ভিপি নুরের স্ট্যাটাস
MostPlay

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে নিজ কক্ষে রোববার দুপুরে হামলার শিকার হন সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ভিপি নুরসহ আহতদের অভিযোগ–  মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পাশাপাশি ছাত্রলীগ এ হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। এ হামলায় প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোন কোন সদস্যরা জড়িত তা জানিয়ে আজ সোমবার একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন হাসপাতালে শয্যাশায়ী ভিপি নুর।

নিজের ফেসবুক পেজে নুরের দেয়া সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকের উদ্দেশে দেয়া হলো,

‘আমাদের ওপর গতকালের হামলার মূল নায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্চিত চন্দ্র দাস এবং সেক্রেটারি সাদ্দাম হোসেন। এদের দুজনের নেতৃত্বেই আমাদের ওপরে হামলা করা হয়।সবার আগে এই দুইজনের গ্রেফতার দাবি করছি। অন্য কোনো সাজানো নাটক বাংলার ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না।’

এর আগে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে হামলার বিবরণ দেন ভিপি নুর।

তিনি বলেন- ‘গতকালকে আমি ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। গত ১৭ ডিসেম্বর যে আমার আঙ্গুল ভেঙেছিলো, এটার ফলোআপ করার জন্য। ডাক্তার দেখানোর সময় আমার সঙ্গে আমার সংগঠনের ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী ছিলো। ডাক্তার দেখিয়ে আমি ডাকসুতে উঠেই সবেমাত্র রুমে ঢুকেছি, অর্ধেক ঢুকতে পেরেছে আর অর্ধেক ঢুকতে পারেনি। এর মধ্যেই পেছন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এবং মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রড, বাঁশ, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে।

আমার রুমে চেয়ার ছিলো, এগুলো নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেই, তখন ওরা সব দৌড় দেয়, নীচে চলে যায়। এরপর আমরা ভেবেছি যে ওরা আর আসবে না। আমরা তখন রুমে বসি এবং তখন দেখছি যে ওরা বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে। তখন আমি ডাকসুর স্টাফদের ডেকে বললাম, কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপরও ওরা আমরা রুমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিলো।

আমি সবাইকে বলেছি যে, সবাই যেনো বসে। তারপর ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত, তারা গেটের কলাপসিবল খুলে তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে রুমে ঢুকে। ঢুকেই তারা আমার আশপাশে যারা ছিলো, ওদেরকে মারছিলো। তিনজনকে মেরে সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দিয়েছে সাদ্দাম, সনজিত নিজে থেকে। সনজিত নিজেও আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। তখন আমি বলেছি- আপনি ডাকসুর কে? আপনি আমাকে চার্জ করেন? তখন ও বলেছে, আমি কে? কিছুক্ষণ পরেই টের পাবি।

তারপর এ কথা বলে সাদ্দাম, সনজিত বের হয়ে যাওয়ার পরে লাইট বন্ধ করে ওরা বাঁশ, রড নিয়ে হামলা করে। তখন আমার যারা সহকর্মী ছিলো, ওরা তো আমাকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ওগুলোও ভেঙে গেছে। যারা ঠেকাতে গিয়েছে ওরা আমার ছোট ভাই, আহত, আইসিইউতে ছিলো রাতে, এখন বেডে এসেছে। ফারাবী এখনও লাইফ সাপোর্টে আছে।

এখন আমরা যেহেতু ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করি, এই কারণে ক্ষোভটা আমাদের ওপর বেশি। মুখবন্ধ রাখার চেষ্টা তো আগেও করেছে। গতকাল কিন্তু হত্যা চেষ্টা করেছে একেবারে। আমার ওপর তিন দফায় হামলা করেছে, আহত না হওয়া পর্যন্ত চলেছে।

আমার শরীরের ডান পাশ হয়তো অচল করে দিয়েছে, হাতের এদিকে মেরে। আমার দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান, সচেতন মানুষ, রাজনীতিবিদদের প্রতি- ডাকসু তো কোনো ব্যক্তি না, ডাকসু একটা প্রতিষ্ঠান, ডাকসুতে ঢুকে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে এভাবে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে, পাকিস্তানি হানাদারদেরও হার মানিয়েছে।

একজন একজন করে রুম থেকে ধরে নিয়ে মেরেছে। এই ঘটনাগুলোর যদি দেশবাসী প্রতিবাদ না করে, এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যদি প্রতিরোধ গড়ে না তুলে, আর কেউ কথা বলবে না। আবরার বুয়েটের ছাত্র, তাকে ঠেকাতে পারেনি, তাকে মেরে ফেলেছে ছাত্রলীগ। আমাদেরকে যে এই আধমরা করে রেখেছে, প্রতিনিয়ত মার খাচ্ছি। ওদের বিরুদ্ধে যদি কথা না বললে, শুধু দেখতে আসলে, ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সমবেদনা জানাতে হবে না।

এ ঘটনায় কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন কী না? জবাবে নুর বলেন, “আইনানুগ ব্যবস্থা এখন সাধারণ মানুষের জন্য আছে? আমি গত ১৮ ডিসেম্বর হত্যা অপচেষ্টার মামলা করেছিলাম, তারপরেও গতকালকে এই হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তো কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

এর আগে, বগুড়াতে মামলা করতে গিয়েছি, মামলা নেয়নি। আমি নিজে জিডি করতে গিয়েছিলাম, জিডি নেয়নি। এখন আইন, আদালত সবই তো ক্ষমতাসীনদের পকেটে বন্দি। আদালতে আমরা তো প্রতিকার পাবো না। বরং আরও নতুন করে হয়রানির শিকার হবো’।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password