দৈনন্দিন কিছু ভুলে ডেকে আনে ক্যান্সার

দৈনন্দিন কিছু ভুলে ডেকে আনে ক্যান্সার
MostPlay

ক্যান্সার অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ক্যান্সার নিয়ে সব মানুষের উদ্বিগ্নতার শেষ নেই। দৈনন্দিন এমন কিছু ভুল আমরা করে থাকি যাতে রয়েছে মারাত্মক রকমের ক্যান্সারের ঝুঁকি। কারণগুলো জানলে সচেতনতা বাড়ালে মরণঘাতি এ ব্যাধি থেকে কিছুটা হলেও নিজেকে নিরাপদ রাখা যাবে।

স্ট্রেস : আধুনিক জীবনে এই জিনিসটি বাদ দিয়ে দিন কাটে না। অথচ সব রকম লাইফস্টাইল ডিজিজকেই বাড়িয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এই স্ট্রেস। বিশেজ্ঞদের মতে, এই স্ট্রেস শরীরকে ভেতর থেকে ক্লান্ত করে ও কোষগুলোকে কমজোরি করে। ফলে কোষ দ্রুত ভাঙতে শুরু করে এবং শরীরকে ক্যানসারের উপযোগী করে তোলে।
 
ই-সিগারেট ও ধূমপান : তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের পরিবর্তে অনেকেই ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন। অনেকেই ভেবে থাকেন, এটি ব্যবহারের ফলে কম ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ই-সিগারেটেও সমান ক্ষতি হয়। সাধারণ বিড়ি-সিগারেট ও ই-সিগারেট- সব ক্ষেত্রেই শরীরে ঢুকে পড়ে তামাক ও কার্বন।
 
ক্যানসার দানাবাঁধার সবরকম উপাদান এতে রয়েছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মলিকিউলার সায়েন্সে’ প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ই-সিগারেটের অভ্যাসের কারণে মুখগহ্বরের টিস্যুতে নানারকম পরিবর্তন দেখা যায়। যে পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসার ডেকে আনে।
 
প্রক্রিয়াজাত খাবার : প্যাকেটবন্দি মাছ, মাংস, সস, বেকন, সালামি ও হ্যাম আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এগুলোকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন ও গ্রুপ-২-এ কার্সিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অত্যাধিক পরিমাণে এ সব খেলে ক্যানসারের বীজ শরীরে ঢোকে।
 
গরম চা-কফি : খুব গরম চা বা কপি আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যানসারে’ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, খাদ্যনালীতে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে ফুটন্ত চা খাওয়ার প্রবণতা। যারা প্রায় প্রতিদিন ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রার চা পান করেন, তাদের এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৬৫ ডিগ্রির ওপর কোনো পানীয় খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে মুখ, গলা ও খাদ্যনালীতে ফুয়েল টিউমার থেকে ক্যানসার ডেকে আনে।
 
প্লাস্টিক : আমরা নিত্যপ্রয়োজনে প্লাস্টিক বিভিন্ন পাত্র ব্যবহার করে থাকি। ঘরোয়া দূষণের অন্যতম উৎস হল এ প্লাস্টিক। প্লাস্টিকে বিসফেনল যৌগ থাকে। এই যৌগ খাদ্যদ্রব্য ও পানির সংস্পর্শে এসে সেগুলোকে দূষিত করে তুলতে পারে। এর ফলে প্রস্টেটের মতো অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণেরও ক্ষতি হয়। সাধারণ কোনো প্লাস্টিকের বোতলে গরম পানি রাখলে বা প্লাস্টিকের পাত্রে মাইক্রোওভেনে খাবার তৈরি করলে অথবা পাত্রগুলোকে ডিটারজেন্টে ধুয়ে নিলে বিপিএ মুক্ত হয়।
চিনি : মাছ-মাংসের স্বাদ বাড়াতে আমরা তেলে চিনি ভেজে লাল করে নেই। মাংসের ঝোলে লালচে রং করার জন্য এটি খুব ব্যবহৃত পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি অত্যন্ত মারাত্মক। এমনিতেই চিনি সরাসরি ক্যানসারের কারণ কি না, তা নিয়ে বিশ্বে নানাবিধ গবেষণা চলছে। অনেকের মতেই চিনি কোষকে ভাঙতে সাহায্য করে। তাই চিনি খুব নিরাপদ নয়। আর চিনি ভাজলে চিনির কার্বন যোগ ভেঙে তা সরাসরি খাবারে মেশে। এ কারণেই চিনির পরিবর্তে লাল বাতাসা, গুড় অথবা মধু ইত্যাদি ব্যবহার করতেও পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
 
হেয়ার ডাই : চুলে রং করতে আমরা সাধারণত হেয়ার ডাই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এ ডাই থাকে অ্যামোনিয়াসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক- যা চুলের ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ও কার্সিনোজেনের মতো আচরণ শুরু করে। বাজার পাওয়া প্রায় সব ডাইতেই এই উপাদানগুলো থাকে। ‘
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যানসারে’ যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানিয়েছেন, এই ডাই থেকে স্তন ক্যানসার ও ত্বকের ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
দূষণের মধ্যে থাকা : বাসা-বাড়িতে ধুলাতে কোনোরকম প্রতিরোধক ছাড়া বসবাস করা। পরিবেশের দূষণ। এ সব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে ক্যানসার। তাই চলাচলের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাস্ক (বাজারে পাওয়া প্রচলিত মাস্ক নয়) কিনে ব্যবহার করা।
 
দূষণ বেশি থাকলে বাড়ির চারপাশে বেশি করে গাছ লাগানো ও এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার ইত্যাদি উপায়ে দূষণ রুখতে হবে। দূষণের কারণে শরীরে কার্বনের নানা যৌগ জমে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password